বীজতলার সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
ফসল বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করা যায়। এমন অনেক ফসল আছে যেগুলোর বীজ সরাসরি মূল জমিতে বপন বা রোপণ করা হয়, যেমন- লালশাক, পালংশাক, পাট, সরিষা, মূলা ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু সবজি আছে যেগুলোর বীজ সরাসরি মূল জমিতে বপন বা রোপণ করা হয়না; যেমন-কপিজাতীয়, বেগুন, টমেটো, পেঁপে ইত্যাদি। এগুলোর বীজ কোন স্থানে বা পাত্রে বপন করে আগে চারা তৈরি করে নেয়া হয়। এ চারা উৎপাদনের স্থানকে বীজগুলা বলে। বীজতলায় বিশেষ যত্নের সাথে চারা উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। বীজতলার মাটিতে চারা জন্মায় এবং জীবনের প্রথম ধাপ সেখানে অতিবাহিত করে। তাই বীজের সুষ্ঠ অঙ্কুরণ ও চারার সুষ্ঠু বৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য বীজতলার স্থান উঁচু ও খোলামেলা হওয়া উচিত এবং সেচ ও নিকাশ সুবিধা থাকা বাঞ্ছনীয়।
বীজতলার ধরন ও প্রস্তুত প্রণালী অনুসারে বীজতলাকে দুভাগে ভাগ করা যায়; যেমন- (ক) স্থানান্তরযোগ্য ও (খ) অস্থানান্তরযোগ্য।
(ক) স্থানান্তরযোগ্য বীজতলা
প্রতিকূল পরিবেশে বা স্বল্পসংখ্যক চারা তৈরির জন্য বা বিশেষ প্রয়োজনে সরাসরি জমিতে বীজতলা তৈরি না করে স্থানান্তরযোগ্য পাত্রে বীজতলা করা হয়। পাত্রটি কাঠের, পাঠিকের বা টিন যারা তৈরি করা যেতে পারে।
স্থানান্তরযোগ্য বীজতলার সুবিধা
উপযুক্ত জারগার অভাব ও প্রতিকূল আবহাওয়া বিশেষত ও বৃষ্টি ৰাসলের সময়ে খোলা আকাশের নিচে সবজির চারা উৎপাদান করতে বিশেষ অসুবিধা হয়। তাছাড়া পারিবারিক সবজি বাগানের সামান্য সংখ্যক চারার জন্য বৃহদাকারের বীজতলা তৈরি করার যুক্তিযুক্ত নয়। তাই সরাসরি ভূ-পৃষ্ঠের উপরে বীজতলা তৈরি না করে স্থানান্তরযোগ্য বীজতলায় চারা উৎপাদন করা হলে সেগুলো বৃষ্টি বাদল ও প্রখর রোদে বা শীতের সময়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা যায়। ফলে স্থানাভরযোগ্য বীজতলায় প্রতিকূল পরিবেশে কম খরচে চারা উত্তোলন করে আগাম ফসল জন্মানো ও অধিক মুনাফা লাভের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়।
স্থানান্তরযোগ্য বীজতলা তৈরির নিয়ম
প্রথমে ঢাকনাবিহীন কাঠের বাক্স, প্লাষ্টিক, মাটি বা কাঠের ট্রে, চেষ্টা আকৃতির অগভীর মাটির পাত্র, বাঁশের ঝুড়ি, পলিথিন ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি বা সংগ্রহ করতে হয়। স্থানান্তরযোগ্য বীজতলার পাত্র টেকসই, সঙ্গ, ওজনে যাক্ষা। এর তলার ছিদ্রযুক্ত ও ১৫ সে. মি. এর কম গভীর হওয়া উচিত। নাড়াচাড়ার সুবিধার্থে হাতলযুক্ত ও আকারে ছোট হলে ভাল হয়। কাঠের বাক্স, ট্রে ইত্যাদি ৬০, ৪৫, ১৫ সে. মি. এবং মাটির পাত্র, বাঁশের ঝুড়ি ইত্যাদি আকারে বড় হলে সহজে স্থানান্তর করা যায় না। একসাথে অনেক চারা উৎপাদনের জন্য গ্রীণ হাউজে জাঁশ, কাঠ বা স্টীলের কাঠামো তৈরি করে অনেকগুলো চারার বাক্স বা পাত্র ধাপে ধাপে সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
পাত্রের তলায় বিশেষত ও ছিদ্রের উপরে মাটির পাত্র ভাংগা চাড়া, ইটের খোয়া, শুকনো পাতা ইত্যাদি বিছিয়ে দিয়ে ৫ সে.মি. পুরু করে বালি দিতে হয়, যেন অতিরিক্ত পানি বের হতে পারে। অতপর সার মাটি দিয়ে পাত্র ভর্তি করে বীজ বুনতে হয়। (৫০% পচানো গোবর সার, তবে ১০ কেজির প্রতি ঝুড়িতে ৬ গ্রাম ইউরিয়া, ৪ গ্রাম টিএসপি, ৬ গ্রাম এমওপি, ১ গ্রাম সেভিন মেশাতে হবে)।
বাঁশের বুদ্ধি, মাটি, কাঠ বা প্লাস্টিকের বাক্স, ট্রে, পানিতে অসমান অবস্থার কচুরিপানার গুণ, পলিথিন ব্যাগ ইত্যাদি। বিভিন্ন পাত্রে চারা তৈরি করলে দুর্যোগপূর্ণ যেকোন নিরাপদ স্থানে নেওয়া যায়। নিচু এলাকায় বা যে সকল স্থানে কিছু সময়ের জন্য প্লাবিত থাকে সে সকল স্থানে চারা তৈরির জন্য মাচা তৈরি করা হয়। এই মাদা পানির ওপরে ভাসমান থাকে এবং এতে বিভিন্ন এজন্য বিভিন্ন খড়কুটা বা কচুরি পানা ব্যবহার করা হয় এই মাচার খড়কুটা পচার পর তাতে কুমড়াজাতীর, বেগুন, টমেটো ইত্যাদির নির্দিষ্ট দূরত্বে বপন করা হয়। এই বীজতলা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে টেনে নেয়া যায়।
অস্থানান্তরযোগ্য বীজতলা
সারি বীজতলা তৈরি করা হয় তা শ্রেণিভুক্ত। এ সব শ্রেণির বীজতলা সাধারণত খোলামেলা আলোতামুক্ত উঁচুস্থানে তৈরি করা হয়। অনেক সময় পলিথিন করে গ্রিনহাউজ বা কাঁচ ঘরের মধ্যে এ ধরণের বীজতলা তৈরি করা হয়। অস্থানান্তরযোগ্য বীজতলাকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়-
(১) স্থায়ী
(২) অস্থায়ী
১) স্থায়ী বীজতলা যে সকল স্থানের মাটি এঁটেল বা পানির স্তর উপরের দিকে বা মাটি সে সকল স্থানে এ ধরনের বীজতলা তৈরি করা হয়। বীজতলার জন্য স্থান নির্বাচন করে মাপযোগ দিয়ে সেই স্থানের মাটি কোদাল দিয়ে প্রায় ৬ ইঞ্চি বা ১৫ সে. মি. গভীর করে খুড়ে তুলে ফেলতে হয়। তারপর নিমোক্তভাবে তিনটি স্তরে সাজিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়।
(১) সর্বনিম্ন স্তরে - ৭.৫ সে. মি বা ৩ ইঞ্চি সুড়িকি, ভাঙা ইট , পোড়ামাটি
(২) মধ্য স্তর- ৭.৫ সে. মি বা ৩ ইঞ্চি, দোঁ-আশ মাটি বালির সমভাবে মিশ্ৰণ
(৩) উপরের স্তরটি-৭.৫ সে. মি বা ৩ ইঞ্চি দোঁআশ মাটি, পচা গোবর ও পাতা পচা সারের মিশ্রণ।
উপরের স্তরটি জমির তল অপেক্ষা শীতকালে ৭-৮ সে. মি. এবং গ্রীষ্মকালে ১০-১৫ সে.মি. উঁচু করতে হয়।বর্ষার সময় যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য ছিদ্রেযুক ইট কিংবা বাঁশের চাটাই দ্বারা পাশ দিয়ে বেঁধে দিতে হয় । বীজতলার মধ্যভাগ দু'পাশ অপেক্ষা সামান্য উঁচু করতে যায়, যাতে বৃষ্টির পানি সহজে দুপাশে সরে যেতে পারে।
কাজের সুবিধার জন্য একটি আদর্শ বীজতলার মাপ সাধারণত ৩ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১ মিটার প্রন্থ হওয়া উচিত। অবশ্য চারার প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করে দৈর্ঘ্য কম করা যেতে পারে। কিন্তু প্রস্থ ১ মিটার অপেক্ষা কম করলে জায়গার অপচয় হবে। গ্রন্থ ১২ মিটার অপেক্ষা বেশি করলে বীজতলার দুপাশ থেকে চারা যত্ন নেওয়ার অসুবিধা হবে। শীতকাল অপেক্ষা গ্রীষ্মকালে বীজতলার উচ্চতা বেশি করলে জায়গার অপচয় হবে। প্রন্থ ১ মিটার অপেক্ষ বেশি করলে বীজতলায় দুপাশ থেকে চারার যতন নেওয়ার অসুবিধা হবে। শীতকালে বীজতলার উচ্চতা গ্রীষ্মকালে অপেক্ষা কম হবে। কারণ গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের পানি জমে চারা নষ্ট হতে পারে। পানি নিকাশের সুবিধার জন্য বীজতলা উঁচু রাখার প্রয়োজন পড়ে। নিচে একটি আদর্শ বীজতলার নমুনা দেয়া হলো ।
চিত্রঃ বীজতলার চার পাশে বাঁশের দেয়াল (ক) (খ) ও (গ)
২। অস্থায়ী বীজতলা বাড়ীর আশেপাশে খোলামেলা আলোবাতাস লাগে এমন উঁচুস্থানে শাক-সবজির চারা তৈরির জন্য বীজতলার তৈরি করা হয়। তবে চারার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সুবিধাজনক স্থানে বিভিন্ন আকারে বীজতলা তৈরি করা হয়।
বীজতলা নির্মানে বিবেচ্য বিষয়াবলি
সবজির চারা উৎপাদনের জন্য অধির অবস্থান, মাটির প্রকৃতি, উর্বরতা, সেচ, ও নিকাশ সুবিধা ইত্যাদি বিষয় নিবিড় ভাবে সম্পর্কৃত। যেমন-
(১) বীজতলার মাটি উর্বর ও দো-আঁশ বা বেলে দোঁ-আশ প্রকৃতির হওয়া বাঞ্ছনীয়
(২) চারা উৎপাদনের জন্য সেখানে দিনের বেলা সব সময় রোগ পড়ে এবং সহজে বাতাস চলাচল করে।
(৩) দেখাশোনার সুবিধার জন্য বাড়ির আশেপাশের উপযোগী।
(8) উঁচু সেচ ও নিষ্কাসন সুবিধাযুক্ত উপযোগী জমি ।
(৫), স্যাতস্যাতে জলাবদ্ধ ও ছায়াযুক্ত স্থান বা গাছের নিচে কখনোই বীজতলা তৈরি করা উচিত নয়।
(৫) বীজতলার মাটিতে উপযুক্ত মিশ্রণের ওপর মাটির পানি ধারণ ও পানি চুয়ানো ক্ষমতা নির্ভর করে।
তাই বীজতলার মাটিতে পরিমাণমত গোবর সার কম্পোষ্ট সার, পাতা পঁচা সার ও দোঁআশ মাটি মেশাতে হয়। দেখা যায় যে বেলে মাটিতে ৬ ঘন্টা সময়ে ১৮০ সেমি. গভীরে যেখানে পানি পৌঁছতে পারে অথচ এটেল মাটিতে ঐ একই দুরত্বে পানি পৌঁছতে ৩ দিন সময় লাগে। অনুরুপ ভাবে পানি ঢালার খাদ হতে উভয় পাশে বেলে মাটিতে যেখানে ৩০ সেমি. দূর পর্যন্ত রস ছড়াতে পারে, সেখানে এঁটেল মাটিতে ৬০ সেমি. এর বেশি দূর পর্যন্ত রস ছড়াতে পারে।
বীজতলা প্রস্তুতে করণীয় বিষয়
বেগুন, মরিচ, কপিজাতীয়, টমেটো, ব্রকোলি ইত্যাদি সবজির বীজ সরাসরি জমিতে বুনে সফলভাবে আবাদ করা যায় না। বীজতলায় বিশেষ যত্নের মাধ্যমে এগুলোর চারা উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। বীজতলায় চারা উৎপাদন করে চারার সহ্যশক্তি বৃদ্ধি করার পর নির্বাচিত স্থানে চারা রোপণ করতে হয়। বীজতলায় চারার বিশেষ যত্ন নেয়ার ব্যবস্থা থাকে বিধায় চারাগুলো সতেজ ও শক্ত চারা হিসেবে গড়ে উঠে। বীজতলার কাজে সুবিধার জন্য বীজতলার মাপ ৩ মিটার দৈর্ঘ ও ১ মিটার প্রন্থ হওয়া প্রয়োজন। তবে চারার সংখ্যা অনুযায়ী কম বা বেশি করা যেতে পারে। গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজতলার উচ্চতার তারতম্য রাখতে হয়। গ্রীষ্মকালীন বীজতলার উচ্চতা সাধারণত ১০-১৫ সে.মি. এবং শীতকালীন বীজতলার ক্ষেত্রে ৭-৮ সেমি. উচ্চতা রাখতে হয়। তবে গ্রীষ্মকালীন সবজির বীজতলায় চারাকে রোদ, বৃষ্টি হতে রক্ষা করার জন্য বীজতলার উপরে চাটাই দ্বারা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। বীজতলায় সমতল হওয়া বাঞ্চনীয় এবং জো অবস্থায় পুনঃ পুনঃ চাষ ও মই দিয়ে ১৫-২০ সেমি. গভীর পর্যন্ত মাটি ঢেলামুক্ত ও ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। বীজতলায় স্বাভাবিক তাপ রক্ষা ও বায়ু চলাচলের সুবিধার জন্য কম্পোষ্ট বা গোবর সার মেশাতে হয়। বীজতলার মাটি রোগ বালাই ও কীটমুক্ত করতে হয়।
ভেজা অবস্থায় জমি চাষ করা উচিত নয়। জমি তৈরি করণের সময় শেষ চাষের পূর্বে মৌল সার সম্পূর্ণ জমিতে ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। বীজতলার মাটি প্রস্তুতে কয়েকটি নির্দেশাবলি নিচে দেওয়া হলো-
১. দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটি রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিতে হবে।
২. বীজতলার মাটির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ভর করে মাটি কণার ওপর। তাই বীজতলায় শুধু বালি বা কাদামাটি ব্যবহার করা মোটেই উচিত নয়।
৩. মাটিতে কাঁকর, আগাছা ইত্যাদি থাকলে তা ভালভাবে বেছে বা চালনিতে চেলে নিতে হবে।
৪. বীজতলার মাটিতে বায়ু চলাচল, পানি ধারণ ক্ষমতা ও খাদ্যের প্রাপ্যতা এবং গরম রাখার জন্য কম্পোষ্ট সার মেশাতে হবে।
৫. পোকামাকড় প্রতিরোধের জন্য সেভিন, কার্বোফুরাণ বা ক্যাপটান ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. সারের বিক্রিয়া শেষ হওয়ার জন্য বীজ বপণের ৫-৭ দিন আগে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
৭. বাক্স বা পলিব্যাগে মিশ্রিত মাটি ভরতে হলে মাটি ভিজিয়ে ৫-৭ দিন রাখার পর পত্রে মাটি ভরতে হবে।
৮. পটে মাটি ভরতে হলে পটের আকার ভেদে পটের উপরের কিনারা হতে ১ থেকে ৩ সেমি. খালি রাখতে হবে। তাতে পানি দেয়া ও অন্যান্য পরিচর্যা করা সহজ হবে।
চারা উৎপাদনের জন্য মাটির মিশ্রণ-বীজতলার জন্য মাটি খুন উর্বর বা খুব অনুর্বর হওয়া উচিত নয়। নিচে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মাটির মিশ্রণ তৈরি করা যেতে পারে।
১) পঁচা গোবর ১ ভাগ + বালু ১ ভাগ + ভিটি মাটি ১ ভাগ। অথবা
২) পঁচা গোবর ১ ভাগ + বালু ২ ভাগ। অথবা
৩) পুকুর পঁচা ডোবা, খাল বা দীঘির তলদেশের মাটি অথবা কম্পোষ্ট ২ ভাগ + বালু ১ ভাগ অথবা ৪) ভিটামাটি ১ ভাগ + কম্পোষ্ট বা পঁচা গোবর ১ ভাগ + রাসায়নিক সার (প্রতি ঝুড়ি মাটিতে ৬ গ্রাম ইউরিয়া, ৪ গ্রাম, টিএসপি, ৬ গ্রাম পটাশ খুব ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এভাবে মিশ্রণ তৈরি করলে সে মাটি ভাল বীজতলা তৈরির জন্য উপযুক্ত হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য কমপক্ষে ১০ কেজি পঁচা গোবর বা কম্পোষ্ট সার প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত পানি নিকাশ ও চারার গড়ন ও বাড়নের উপযুক্ত পরিবেশের জন্য এ কাজ অতি উত্তম ।
অধিক সংখ্যক চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজতলা তৈরি পদ্ধতি সহজ ও সন্তা। সেক্ষেত্রে বীজতলা তৈরি যেভাবে করবেন-
১. পূর্ব-পশ্চিমমুখী করে বীজতলা তৈরি করবেন। এভাবে বীজতলা করলে সকল চারার গায়ে সূর্যালোক পড়বে।
২. ২০ থেকে ৩০ সে.মি. গভীর পর্যন্ত মাটি আগলা করে মাটির ভেতর থেকে পাথর, আগাছা ও চারার সেঁকড় বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টিকারী দ্রব্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩. বীজতলার বাইরে বসেই যাতে বীজ বপন, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যার কাজ সহজে করা যায় সে লক্ষ্যে। বীজতলা কতটুকু চওড়া হবে তা নির্ধারণ করতে হবে ।
৪. বর্ষাকালে বীজতলার উপরিভাগে পাশ থেকে মাটি নিয়ে উঁচু করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে বেডের উঁচু উপরিতলের চারপাশে দিয়ে মাটির পাড় তৈরি করে সেচের পানি বীজতলায় ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. বর্ষাকালে আধূলা বাঁশ বা ইট দ্বারা বীজতলার চতুর্দিকে প্রাপ্ত দেয়াল তৈরি করতে হবে। ভারী বৃষ্টিপাতে বীজতলার ব্যাপক ক্ষক্সরোধ করার জন্য এ ব্যবস্থা খুবই কার্যকর
৬. বীজতলায় বালু এবং পঁচা গোবর বা কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করে মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রতি ১০ বর্গমিটার বীজতলার জন্য ১ ঘন মিটার বা ৩৫ ঘনফুট পঁচা গোবর বা কম্পোষ্ট সার প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন ও চারার গড়ন বাড়নের জন্য এ কাজটি উত্তম।
বীজতলা জীবাণুমুক্ত করণের সহজলভ্য ও কার্যকরি পদ্ধতি
বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ কী এবং কেন করা হয়
আমরা যখন একটি বীজতলায় বীজ বপন করি তখন দেখা যায় যে কিছু বীজ একেবারে পদ্মার না। আবার কিছু কিছু বীজ গজানোর পর ঢলে পড়ে ও পরে মারা যায়। কেননা বীজতলার মাটিতে নানা ধরনের কোটি কোটি জীবাণু আছে। এ সকল জীবাণুর মধ্যে কিছু কিছু জীবাণু আছে যা গাছপালার জন্য উপকারী, আবার কিছু কিছু জীবাণু আছে যা গাছপালার জন্য অপকারী। এদের মধ্যে ফিউজিরিয়াম, রাইজোকটনিয়া, পিথিয়াম, সারকোলপারো ইত্যাদি ধরনের ছত্রাক বীজতলার চারার ক্ষতি করে থাকে। আবার কিছু কিছু জীবাণু আছে যারা ব্রীজের গায়ে লেগে থাকে। যখন বীজ গজায় তখন ঐ জীবাণু কার্যকর হয়ে উঠে ও চারাকে আক্রমণ করে। তাতে চারা ঢলে পড়ে বা ঝলসে মারা যায়। মাটিতে নানা ধরনের কীটপতঙ্গ থাকে এদের মধ্যে উইপোকা, কাটুই পোকা, পিঁপড়া, কিন্তু ক্রিকেট, যোগ ক্রিকেট ইত্যাদি চারার শিকড় কেটে দিয়ে ক্ষতি করে। তাই সুস্থ সবল চারা উৎপাদনের জন্য আমাদেরকে বীজ ও বীজতলা উভয়ই শোধন বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। বীজ বাহিত রোগজীবাণু বা বীজতলার মাটিতে থাকা নানা ধরনের ছত্রাক বা রোগের জীবাণু ও পোকামাকড় চারার ক্ষতি করে থাকে। এগুলোকে ধ্বংস করে সুস্থ, সবল ও সতেজ চারা তৈরি করার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করাই হচ্ছে বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ।
বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি
বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু পদ্ধতি ব্যয়বহুল এবং কিছু কিছু পদ্ধতি অল্প খরচের। কিছু কিছু পদ্ধতি পরিবেশকে দূষণ করে, আবার কিছু কিছু পদ্ধতি পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে। বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতিকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- (১) যান্ত্রিক (২) জৈবিক (৩) রাসায়নিক (৪) কর্ষণ বা পরিচর্য্যামূলক এবং (৫) আইনগত দমন।
(১) যান্ত্রিক পদ্ধতি- বীজতলার উপরের ঘরের ১০-১৫ সে. মি. গভীর করে মাটি তুলে চুলার উপর লোহার কড়াই বা ড্রামে নিয়ে ঢাকনাযুক্ত অবস্থায় তাপ দিয়ে তাড়াতাড়ি জীবাণুমুক্ত করা যায়। এ পদ্ধতিতে ১ ঘন্টা সময় আগুনের তাপে মাটিকে ভেজে নিয়ে জীবাণুমুক্ত করা যায় ।
অনেক শিল্পোন্নত দেশে মাটির মধ্যে ছিদ্রযুক্ত ধাতব পাইপ বসায়ে তার মধ্যে দিয়ে গরম জলীয় বাষ্প প্রয়ো করে জমিকে বা বীজতলাকে আংশিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা যায় ।
১। জৈবিক পদ্ধতি ও একইস্থানে বা একই বীজতলায় প্রতি বছর একই সবজি বা ফসলের বীজ বপন করা উচিত নয়। বীজতলার মাটিতে মাঝে মাঝে গাঁদা ফুলের চাষ করে মাটির সাথে মিশায়ে দিয়ে কিছু কিছু জীবাণুমুক্ত করা যায়। যেমন-নিমাটোড। এছাড়া নিম পাতা, ভাষাকের গুড়া, বীজতলার মাটিতে মিশিয়ে জীবাণুমুক্ত করা যায়। যেমন-উই, পিঁপড়া ইত্যাদি।
২। রাসায়নিক পদ্ধতি- রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা বীতলা জীবাণুযুক্তকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে। যেমন (ক) ফরমালডিহাইড (গ) মিথাইল ব্রোমাইড ও (গ) ক্লোরোপিলি (ঘ) ভ্যাপাম (ও) ডাওফিউম (চ) নেমাপন ফরমালডিহাইড সাধারণত ১ লিটার বাণিজ্যিক ফরমালডিহাইডের সাথে ৫০ লিটার পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। প্রতি ১ বর্গ মিটার জায়গার বীজতলায় প্রায় ১২ লিটার পরিমাণ এই মিশ্রণ সমানভাবে ছিটাতে হবে।
চিত্রঃ কাদামাটি দিয়ে প্লাষ্টিকের মাথা ঢেকে দেওয়া হয়েছে প্লাষ্টিক শিটে কোন ছিদ্র থাকবে না এবং কীট যথেষ্ট পুরু হবে।
(১) কর্ষণ বা পরিচর্যামূলক বীজতলার মাটিতে সৌরতাপের মাধ্যমে জীবাণুযুক্ত করা যায়। এটি আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে সা ও সহজ কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্তকরণের জন্য বীজতলা উত্তমরূপে কর্ষণ করে প্রখর রৌদ্রে উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং এ প্রক্রিয়া কয়েকবার করতে হবে। এছাড়া বীজতলা ভালভাবে কর্ষণ বা কোপানোর পর সমতল করে, সাদা ও স্বচ্ছ পলিখিন কাঁট দিয়ে সম্পূর্ণ বীজতলার মাটি ঢেকে দিতে হবে। তারপর ২/৩ সপ্তাহ ঢাকা অবস্থায় সরাসরি সূর্যরশ্মি স্বচ্ছ পলিথিন শিটের উপর পড়বে। এতে করে বীজতলার মাটির ভিতর গরম হয়ে যে ভাগ সৃষ্টি হবে তাতে মাটির ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো মারা যাবে। এছাড়া ঢাকা থাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হয়। তাই এ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করার সাথে সাথে বীজতলায় বীজ বপন করা যাবে না কোদাল দিয়ে মাটি ভালভাবে কোপাৱে এই বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস বের করে দিতে হবে। তারপর বীজ বপন করা যাবে। এতে বীজ বা চারার কোন ক্ষতি হবে না।
এ পদ্ধতিতে তাপের ফলে বীজতলার মাটিতে বসবাসকারী পোকামাকড় মারা যাবে অন্যথায় তারা স্থান ত্যাগ করে চলে যাবে। ভাপের মাধ্যমে বীজতলা জীবাণুমুক্ত করতে গেলে মাটিতে রক্ষিত নাইট্রোজেন সার বাতাসে উড়ে যায়। আবার বীজতলা সরাসরি তাপের মাধ্যমেও জীবাণুমুক্ত করা যায়। এ পদ্ধতিতে বীজতলার উপরে ভালভাবে খড় বিছিয়ে দিয়ে তারপর ঐ খড়ে আগুণ ধরিয়ে দিতে হবে। ঐ আগুনের তাপে বীজতলার মাটির উপরের স্তরের ৫ সে.মি. গভীর পর্যন্ত জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে। এ প্রক্রিয়া দ্বারা ক্ষতির হাত থেকে চারাকে মুক্ত রাখা যায়। ১ টি আবার বীজতলায় গরম পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা যায়। এ পদ্ধতিতে বীজতলার উপরিভাগের মাটিতে ১০ সে.মি. গভীর পর্যন্ত ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানি আধাঘন্টা ধরে রাখতে হবে। এতে মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকারক রোগজীবাণু নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু উপকারী জীবাণুর তেমন কোন ক্ষতি হবে না। এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। তবে এতে খরচ বেশি, তাই গরিব দেশের জন্য সহজসাধ্য নয়।
বীজ বপণের পূর্বে বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষাকরণ। বীজের নমুনা সংগ্রহ- বীজ পরীক্ষা করার জন্য বীজের নমুনা সংগ্রহ করার পদ্ধতির ওপর পরীক্ষার ফলাফল নির্ভর করে। তাই বীজ যেখানে রাখা আছে সেখান হতে নমুনা সংগ্রহ করার সময় খুব সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে। বীজের পাত্র বা বস্তার উপরের দিক, নিচের দিক ও মাঝখান হতে সমপরিমাণে বীজ নিতে হবে। বীজের পাত্র বা বার সংখ্যা বেশি হলে নমুনা বেশি হবে। নমুনা সংগ্রহের সময় বীজের নাম, জাত, তারিখ, কোথা হতে বীজ পাওয়া গেছে তা লিখে রাখতে হবে। কয়েকটি নমুনা সংগ্রহ করে একত্রে মেশাতে হবে। তারপর বড় বীজের জন্য ১০০-২০০ গ্রাম এবং ছোট বীজের জন্য ২৫-৫০ গ্রাম নমুনা নিলেই চলে।
বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা- বপনের আগে শাক সবজির বীজ ভালোভাবে পরীক্ষা করা একার প্রয়োজন। সাধারণত ভালো ও বিশুদ্ধ বীজের অভাবে বেশি ফলন আশা করা যায় না। বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষার মাধ্যমে বীজে কী পরিমাণ ধুলা বালি, ভাঙ্গা বীজ, অন্যান্য ফসল বা আগাছার বীজ আছে তা নির্ণয় করা যায়। প্রথমে নমুনা বীজ হতে কিছু পরিমাণ বীজ নিভিতে ওজন করে নিতে হবে। এরপর ঐ বীজ একটুকরা কাঁচ বা পরিষ্কার কাগজের উপর ছড়াতে হবে। ছড়ানো বীজ হতে প্রতিটি বীজের বিশুদ্ধতা দেখে ভালো বীজ হতে অন্যান্য সকল দ্রব্যাদি আলাদা করতে হবে। যেমন- ধূলাবালি, কাঁকর, ভাঙ্গা বীজ, রোগাক্রান্ত বা পোকায় খাওয়া বীজ, বীজের খোসা, আগাছা বীজ, অন্যান্য ফসলের বীজ ইত্যাদি।
নিচে দেয়া সূত্রানুযায়ী বীজের বিশুদ্ধতা নির্ভর করে শতকরা হারে প্রকাশ করা যেতে পারে ।
বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের সূত্র -
বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা
বীজের গুণ বিশেষভাবে নির্ভর করে তার অঙ্কুরোদগম ক্ষমতার ওপর। অঙ্কুরোদগমের ক্ষমতা পরীক্ষার মাধ্যমে বীজের স্বাভাবিক চারা গজানোর ক্ষমতা এবং একক জমিতে বীজের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা সন্তোষজনক না হলে জমিতে বিশুদ্ধ বীজ বুনেও ভালো ফলন পাওয়া যায় না। তাই বীজ ফেলার আগে বীজের অঙ্কুরোদগম হার জেনে নেওয়া উচিত। তা হলে বীজের সঠিক পরিমাণ, চারার সংখ্যা ইত্যাদি নির্ণয় করা সহজ হবে। ইতোপূর্বে বীজ গজালেই তা হিসেব করে বীজের গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে তা বিবেচনা করা হয় না। কেননা অনেক বীজ গজানোর পর সুস্থ ও সবল চারা বা গাছ উৎপাদন করতে পারে না। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে বীজ গজানোর পর চারার মূল, কার ও পাতা সমানুপাতিকভাবে বৃদ্ধি দেখে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়। চারা উৎপাদনের বীজ ব্যবহারের পূর্বে সাধারণত ৬-৮ মাস গুদামজাত করে রাখা হয় ।
এ সময়কালের মধ্যে বর্ষা মৌসুম পার হয়ে যায়। তাই বীজ বোনার আগে বীজ পরীক্ষা করা উচিত। খারাপ বীজ বপন করলে অপচয় হবে এবং ফলন কমে যাবে। বীজের অঙ্কুরোদগমের হার বের করার জন্য একটি পেট্রিডিস বা মাটির বা কাঁচের পাত্র, ভেজা কাপড় বা চট নিতে হবে। পেট্রিডিস হলে এক শত চোষ কাগজকে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ভিজিয়ে পেট্রিডিসে বীজ বসাতে হবে।
বীজ গজানোর পর গজান বীজ গণনা করে বীজের অঙ্কুরোদগমের হার নির্ণয় করা যায়। বীজ গজানো পরীক্ষার বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলো।
যেমন - বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষার জন্য এক পঞ্চ কাপড় বা চট বিছিয়ে নিতে হতে। এরপর বিশুদ্ধ বীজ হতে বড় বীজ হলে ৫০টি এবং ছোট হলে ১০০টি বীজ পরীক্ষার জন্য নিতে হবে। এরপর পেট্রিডিস বা মাটির পাত্র বা ভিজা কাপড়ে বীজগুলো এমনভাবে বসাতে হবে যেন একটির সাথে আরেকটি লেগে না থাকে। কাপড়ে বসানো হলে কাঠির সাথে বীজসহ কাপড় পেচাতে হবে এবং দেবো লিখে বীজসহ কাপড় ভিজিয়ে রাখতে হবে। অপরদিকে বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষার জন্য অন্য কোন পাত্র যেমন মাটির বাসন নেওয়া যায়। এতে বালু দিয়ে পাত্রটির উপরের কিনারা হতে কিছু নিচ পর্যন্ত ভর্তি করতে হবে। এরপর পরিমাণমত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে।
বীজ বসানোর পর পেট্রিডিস বা মাটির পাত্রে ঢাকনা দিয়ে আলো ও তাপ পায় এমন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। আর ভেজা কাপড়ে বীজ বসানো হলে কাপড়টি গোল করে জড়ায়ে অন্ধকার ও গরম জায়গায় রাখতে হবে। এ পদ্ধতিকে জাগ দেয়া বলে। তবে থলেতে বীজ জাগ দেওয়া হলে বীজের থলেটি অন্যান্য খালি থলে বা মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দরকারমত পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। অধিকাংশ সবজি বীজ ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে গজিয়ে যায়। আবার কোন কোন সবজি বীজ গজাতে সপ্তাহখানেক সময় লাগে। বীজ গজানোর মেয়াদ শেষে মোট বীজের সংখ্যা ও অঙ্কুরিত চারার সংখ্যা হিসেব করে লিখে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে বীজ গজানোর গতি, মেয়াদ, চারার চেহারা ইত্যাদি দেখা উচিত।
বীজ গজানোর জন্য বসানোর আগে বীজ রোদে শুকিয়ে নেয়া উচিত। বীজ মোটা ও পুরু হলে ভিজিয়ে নেয়া ভাল। বীজের গজানো সংখ্যা গণনা করে নিচের সূত্রানুযায়ী গজানোর শতকরা হার হিসেব করে নিতে হবে।
সাধারণভাবে শতকরা ৮০ ভাগের ওপরে বীজ গজালে সে বীজ ভালো বলে বিবেচিত এবং তা গ্রহণযোগ্য।
বীজ গজানো ত্বরান্বিত করা ও বীজের গজানোর মধ্যে সমতা রাখা
(ক) । বীজ ভিজিয়ে নেওয়া -বীজের আবরণ যদি শক্ত হয়, তাহলে পানি সহজে বীজের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে এবং সে সমস্ত বীজ গজাতে সময় লাগে। তাই সহজে গজানোর জন্য বপন/রোপণের আগে সে সমস্ত বীজ ভিজিয়ে নিতে হয়। বীজের মধ্যে গজানো সমতা আনয়নের জন্য বীজ ভেজানো হয়েছে, বীজাবরণ নরমও হয়েছে, কিন্তু অঙ্কুর বের হয়নি, এ অবস্থায় বীজ শক্তকরণ করতে হয়।
বীজ নরম হয়েছে, মূলরোম বের হয়নি, কিন্তু বীজ ভেজা, এরূপ বীজ খুব তাড়াতাড়ি রোপণ করে দিলে সব চারা একসাথে গজাবে এবং এগুলোর মৃত্যু হার কম ।
বীজ শোধনের মাধ্যমে গজানোতে সহায়তাকরণ
বীজের বহিরাবরণে ও ভেতরেও রোগ জীবাণু থাকে, যা বীজের গজানোতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই বীজ শোধন করে নিলে সে সমস্ত বীজ তাড়াতাড়ি গজায় এবং ফসলের ফলনও বেশি হয়। বীজ শোধনের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে ।
যেমন (ক) রাসায়নিক, (খ) গরম পানি (গ) ভিজা ও (ঘ) রোদে শুকানো পদ্ধতি ।
(ক) রাসায়নিক পদ্ধতি- বীজ বপন/রোপণের প্রায় ১ মাস পূর্বে শোধন করে রাখলে বীজ বেশি ভাল থাকে । বীজ শোধনে বালাইনাশক ব্যবহারের পরিমাণ।
(খ) গরম পানি পদ্ধতি-পাতলা কাপড়ে থলে বানিয়ে তাতে বীজ ১ কেজি করে বেঁধে গরম পানিতে নিম্নোক্ত নিয়মে রাখতে হবে । এভাবে বীজ শোধনের পর তাড়াতাড়ি বীজ শুকাতে হয়।
গরম পানিতে বীজ শোধন পদ্ধতি
(গ) ভিজা পদ্ধতি- এ পদ্ধতিতে ফরমালডিহাইড, তুঁতে, মারকিউরিক ক্লোরাইড ইত্যাদির যে কোন একটি ঔষধ পানিতে মেশানো হয়। পরে দরকারি বীজ পাতলা মার্কিন কাপড়ে ঢিলা করে বেঁধে ঔষধ মিশানো পানিতে ডুবানো হয়। শোধনের পর দানাজাতীয় বীজ তাড়াতাড়ি রোদে শুকাতে হয়। বীজ বপনের মূহূর্তে শোধন করা হলে ১০০ কেজি বীজের সাথে ২৫-৩০ গ্রাম ক্যাপটান, ভিটাভেক্স, মিশালে সুফল পাওয়া যায়। ভিজা পদ্ধতির জন্য কোন ধাতব পাত্র (যেমন-কাসা, পিতল, লোহা ইত্যাদি) ব্যবহার করা উচিত নয়। নিচের সারণিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি বীজ শোধন পদ্ধতি দেওয়া হলো ।
(ঘ) রোদে শুকানো পদ্ধতি- প্রখর রোদে সাধারণত ৫-৬ ঘন্টা (সকাল ১০ ঘটিকা হতে ৪ ঘটিকা পর্যন্ত) বীজ শুকাতে হবে। কিন্তু খুব ঘন ঘন বীজ ওলট পালট করে শুকাতে হবে, অন্যথা বীজ রোদে পোড়া হতে পারে। ফলে ভ্রুণ নষ্ট হতে পারে। রোদে শুকানো বীজ ঠান্ডায় কিছুক্ষণ রেখে বীজ ঠান্ডা হলে সংরক্ষণ পাত্রে বায়ুরোধী করে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ রাখার জন্য শুকনা নিম পাতার গুড়া/তামাক গুড়া/ছাই/বিষকাটালীর পাতাগুড়া ব্যবহার করা ভাল। তবে কালো রংয়ের পত্র বীজ বেশিদিন ভাল থাকে ।
এক কথায় উত্তর
১. বীজতলার ধরন ও প্রস্তুত প্রণালী অনুযায়ী কয়ভাগে বিভক্ত ?
২. বীজতলার প্রস্থ কত মিটার হলে দু'পাশ হতে যত্ন নেওয়ার সুবিধা হয় ?
৩. খাদ্য হতে উভয় পাশে বেলে মাটিতে রস যেখানে ৩০ সে.মি. পৌঁছতে পারে সেখানে এঁটেল মাটিতে কত সে.মি. পর্যন্ত যেতে পারে?
৪. মাটিতে সারের বিক্রিয়া শেষ হওয়ার জন্য বীজ বপণের কতদিন আগে মাটি ভেজাতে হয় ?
৫. চারা উৎপাদনে মাটির মিশ্রণ করতে পঁচা গোবরের ১ ভাগের সাথে কতভাগ বালি মেশাতে হয় ?
৬. বীজতলা জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতিকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ?
৭. মাটি জীবাণুমুক্ত করতে কড়াইতে মাটি কত ঘন্টা ভাজতে হয় ?
৮. বীজতলা জীবানুমুক্ত করণে ব্যবহৃত ১টি রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখ ।
৯. ক্লোরোপিক্রিণের অপর নাম কী ?
১০. গরম পানি দিয়ে মাটি শোধনে কত ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানি ব্যবহৃত হয় ?
১১. বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষায় বড় বীজের ক্ষেত্রে কতগ্রাম নমুনা নিলেই কাজ করা যায় ?
১২. সাধারণভাবে শতকরা কতভাগ বীজ গজালে সে বীজকে ভালো বীজ বলা হয় ?
১৩. বীজ বপন/রোপণের কত মাস আগে বীজ শোধন করা ভাল ?
১৪. কপি জাতীয় সবজি বীজ শোধরেন জন্য ফরমালডিহাইডে কত মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয় ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সবজি চাষে জলবায়ুর উপাদানগুলোর মধ্যে তাপমাত্রা উদ্ভিদের জীবনচক্রে যে ৩টি মৌলিক প্রক্রিয়া পরিচালিত করে তা উল্লেখ কর।
২. উদ্ভিদের ওপর আলোর প্রভাব কীভাবে পড়ে তা বর্ণনা কর।
৩. সবজি চাষে উৎপাদন উপকরণের মধ্যে বীজ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাও ।
৪. রোগ ও পোকামাকড় দমনে স্পর্শ ও সিস্টেমিক বিষ বলতে কী বোঝায় তার ব্যাখ্যা দাও ।
৫. সবজি উৎপাদনে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপগুলো বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সবজি চাষে জলবায়ুগত সমস্যা কীভাবে সবজির উৎপাদন ব্যাহত করে তা বর্ণনা কর ।
২. জলবায়ুর উপাদানগুলোর মধ্যে তাপমাত্রা চারার ওপর ও অঙ্গজ বৃদ্ধিতে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করে তা বর্ণনা কর।
৩. সবজি চাষে উৎপাদন উপকরণের মধ্যে সার ও বীজের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় তা বর্ণনা কর ।
৪. সবজি চাষে সার্বিক উৎপাদন সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় তা ব্যাখ্যা কর।
টীকা লেখ
১) সংগৃহীত ফসলে তাপমাত্রার প্রভাব
(২) বিতাড়নকারী বিষ।